শরীর সুস্থ না থাকলে কোনো কাজে মন বসে না । প্রাচীনকালে মুনিঋষিগণ
ভগবানের আরাধনা করতে গিয়ে দেখলেন যে – শরীর নীরোগ ও কর্মক্ষম করার প্রয়োজন । এর
জন্য তাঁরা কতকগুলো আসন ও মুদ্রা অভ্যাস করতে আরম্ভ করলেন । শরীরের মাংসপেশীর পুষ্টি সাধনের জন্য
নানা রকম ব্যায়াম অভ্যাস করা যায় – যেমন, খালিহাতে ব্যায়াম, বারবেল নিয়ে ব্যায়াম,
প্যারালাল বার, রিং, কুস্তি ইত্যাদি । কিন্তু যৌগিক ব্যায়াম দেহের অভ্যন্তরের
স্নায়ু মন্ডলী, গ্রন্থি ও অন্যান্য যন্ত্রগুলো যে রকম পুষ্ট ও সবল করতে পারে, অন্য
কোনো ব্যায়াম সে রকম করতে পারে না । স্নায়ুমন্ডলী আমাদের এই দেহযন্ত্রকে চালিত করে
। মস্তিস্ক স্নায়ুমন্ডলীর কেন্দ্রস্থল । এই স্থান থেকে বিভিন্ন স্নায়ুর সাহায্যে
যে আদেশ প্রেরিত হয় – তা মাংসপেশী ও বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে চালিত করে । আজও
দেশী বা বিদেশী এমন কোনও ব্যায়াম পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়নি, যা মস্তিষ্কের মধ্যে
প্রচুর রক্ত প্রবাহিত করে মস্তিষ্ককে সবল ও অধিক কর্মক্ষম করতে পারে । একমাত্র
যোগ-ব্যায়াম তা করতে পারে । সর্বাংগাসন ও মৎস্যাসন এন্ডোক্রীন গ্রন্থিসমূহ যথা,
থাইরয়েড, প্যারাথাইরয়েড ইত্যাদি গ্রন্থিগুলিকে রক্তস্নাত করে এদের যেমন উজ্জীবিত
করে, অন্য কোনো ব্যায়াম সে রকম করতে পারে না । ............
যোগ-ব্যায়াম
অভ্যাসকারী জ্ঞাতব্য বিষয়
১।
যোগ-ব্যায়াম ৫ বছরের ছেলেমেয়ে থেকে ৮০/ ৯০
বছরের স্ত্রী পুরুষ পর্যন্ত সকলেই অভ্যাস করতে পারে । তবে বয়স এবং স্ত্রী-পুরুষ
ভেদে ভিন্ন যোগ-ব্যায়াম ও তার মাত্রা ঠিক করতে হয় ।
২। ৫ থেকে ৮/১০ বছর বয়স পর্যন্ত ছোট ছেলেমেয়েরা
যোগ-ব্যায়াম অর্ধমাত্রায় অভ্যাস করবে, অর্থাৎ যে ব্যায়াম প্রতিবারে ৩০ সেকেন্ড করে ৪ বার অভ্যাস করতে বলা হয়েছে, প্রথম প্রথম
সেগুলি প্রতিবারে ১৫ সেকেন্ড করে ২
বার অভ্যাস করবে । পরে বয়স ও সামর্থ বৃদ্ধির সাথে সাথে আসন অভ্যাসের সময় বাড়িয়ে
প্রতিবারে ৩০ সেঃ করে ৪ বার অভ্যাস করবে । প্রতি আসন অভ্যাসের
পর ১০/১৫ সেঃ শবাসন অবশ্যই অভ্যাস করবে । মনে রাখতে হবে,
দিনে একত্রে ৭/৮ টির বেশি যোগ-ব্যায়াম
অভ্যাস করার প্রয়োজন হয় না ।
৩। আসন
অভ্যাসরত অবস্থায় মনকে শান্ত রাখতে হবে । ধীরে ধীরে অনেক সময় ধরে দম নিতে ও ছাড়তে
হবে । কোন অবস্থাতে দম বন্ধ রাখা যাবে না । এ অবস্থায় মনকে স্থির রেখে ব্যায়ামের
উপকারীতা উপলব্ধি করতে হবে ।
৪। অনেক দিন অভ্যাসের ফলে অনেকক্ষন একাসনে থাকার ক্ষমতা হলে
আসন অভ্যাসকারীরা আসনটি পর পর ৪ বার অভ্যাস না করে ৪/৫ মিনিট ধরে একবার অভ্যাস করে ১/২ মিনিট শবাসন অভ্যাসের পর অন্য আসন অভ্যাস
করতে পারে । গৃহীদের কোন আসনই এককালে ৫ মিনিটের বেশী অভ্যাস করা উচিত নয় ।
৫। আসন
অভ্যাসকারী আসন অভ্যাসকালে যে আসন অভ্যাস করছে তার উপকারিতা সম্বন্ধে চিন্তা করা
এবং নিজ শরীর ও মনের উপর তার প্রভাব উপলব্ধি করতে চেষ্টা করা উচিত ।
৬। যোগ-ব্যায়াম অভ্যাসের নির্দিষ্ট কোন সময় নেই ।
অভ্যাসকারী নিজ সুবিধা মত সকালে স্নানের আগে, সন্ধ্যায় বা রাত্রে খাবার কিছু আগে,
আসন অভ্যাস করতে পারে । তবে সকালে ছাড়া অন্য কোন সময়ে খালি পেটে ব্যায়াম অভ্যাস
করতে নেই । অন্য সময়ে ক্ষুদার্ত অবস্থায় বা ভরা পেটে ব্যায়াম অভ্যাস করা
স্বাস্থ্যের পক্ষে অনিষ্টকর । হাল্কা কিছু খাবার আধ ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা পরে, বা
ভরা পেটে খাবার ৪/৫ ঘন্টা বাদে, যোগ-ব্যায়াম অভ্যাসের প্রশস্ত
সময় । কেবল ব্জ্রাসনই
একটি মাত্র আসন যা পূর্ণ আহারের পর অভ্যাস করা স্বাস্থ্যকর । যোগ-ব্যায়াম অভ্যাসের
আধ ঘন্টা পর আহার করা যায় ।
৭। কম্বলের
উপর বা পাতলা গদির উপর আসন অভ্যাস করা বিধেয় ।
৮। ভিতরে
কৌপিন বা জাঙ্গিয়া পরে উপরে আন্ডারওয়ার বা হাল্কা হাফপ্যান্ট পরে খোলা জায়গায়
সাধারণতঃ যোগ-ব্যায়াম অভ্যাস করতে হবে ।
৯। প্রতি
আসন অভ্যাসের পর ২০/৩০ সেঃ শবাসন অভ্যাস
সাধারণ নিয়ম । তবে শীর্ষাসন অভ্যাসের পর শবাসন অভ্যাস করতে হয় না কারণ শীর্ষাসন অভ্যাসকালে মাথায়
যে রক্ত ওঠে শীর্ষাসনের পর শবাসন অভ্যাসে তা নামতে দেরী হওয়ায় মাথায় ভার বোধ হয় ।
১০।
যোগ-ব্যায়াম অভ্যাসের আগে কয়েকটি খালি হাতে ব্যায়াম (ওয়ার্মিং আপ ) করা অধিক স্বাস্থ্যকর এবং
দ্রুততর ফল লাভের সহায়ক ।
১১। খালিহাতে
ব্যায়াম অভ্যাসের পর আসন অভ্যাসের আগে ৩/৪
মিনিট শবাসনের বিশেষ প্রয়োজন । শবাসন অভ্যাস কালে আমরা যে পরিমান শারীরিক ও মানসিক
শিথিলতা অর্জন করি তা বজায় রেখেই আসন
অভ্যাস করা উচিত । আমরা সাধারণত মিনিটে
১৬/১৮ বার শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে থাকি । শবাসন করার সময় এর গতি কমিয়ে ১০/১২ বার করার চেষ্টা করতে হবে । এর সুফল অনেক
।
১২। কেবল
রোগীরা যারা রোগারোগ্যের জন্য যোগ-ব্যায়াম অভ্যাস করবে, তারা প্রতি আসনের শেষে প্রয়োজন মত ২০/৩০ সেঃ শবাসন অভ্যাস করবে ।
১৩। যোগ-মুদ্রা ব্যাতীত অন্য
কোন মুদ্রা ১০/১২ বছরের কম বয়স্ক ছেলেদের
এবং ঋতু প্রতিষ্ঠিত হয়নি এমন মেয়েদের অভ্যাস করা উচিত নয় ।
১৪। আসন
অভ্যাসকারীর প্রদত্ত আসন ও মুদ্রার গুণাগুণ বিবেচনা করে নিজেদের প্রয়োজন মত ৭/৮ টি আসন ও মুদ্রা বেছে নিয়ে অভ্যাস করা উচিত
।
১৫। যোগ-ব্যায়াম প্রদত্ত নির্দেশ মত শুদ্ধভাবে অভ্যাস করতে
চেষ্টা করা উচিত । তবে প্রথম অভ্যাসকারীর পক্ষে ঠিক শুদ্ধভাবে সকল আসন অভ্যাস করা
সম্ভব হয় না । প্রথম অবস্থায় যদি কোন ভুল হয় তাহলে পুনঃপুনঃ চেষ্টার দ্বারা
শুদ্ধভাবে ইহা অভ্যাস করার চেষ্টা করতে হবে । আসন অভ্যাসে সামান্য ভুল হলেও কোন
ক্ষতি হয় না কারণ স্থিরভাবে সুখে অবস্থানই আসন । সুতরাং কোন আসনই ভুল একথা বলা যায়
না, তবে দেখতে হবে – সেই অবস্থানটি ধীর এবং সুখকর কি না ।
১৬। অনিদ্রায়
এবং স্বপ্নদোষে শোবার আগে গোমুখাসন
অভ্যাস বিশেষ ফলপ্রদ । এ সময় কৌপিন বা জাঙ্গিয়া পরার প্রয়োজন হয় না ।
১৭। মেয়েদের
ঋতুকালে ৪/৫ দিন ব্যায়াম অভ্যাস নিষেধ ।
এছাড়া সমস্ত ব্যায়াম অভ্যাসকারীর সপ্তাহে
৬ দিন ব্যায়াম অভ্যাসের পর একদিন বন্ধ রাখা স্বাস্থ্যকর ।
১৮। নারী
গর্ভ অবস্থায় ৩ মাস পর্যন্ত যোগ-ব্যায়াম অভ্যাস
করতে পারে । প্রসবান্তে ৩ মাস পরে আবার
যোগ-ব্যায়াম অভ্যাস আরম্ভ করলে প্রসবান্তে থলথলে ঝোলা পেট স্বাভাবিক অবস্থা
প্রাপ্ত হয় । দেহের সঠিক গঠন আবার ফিরে আসে এতে কোন সন্ধেহ নেই ।
১৯।
যোগ-ব্যায়াম শেষে মিছরি, চিনি বা আখের গুড়ের
সরবৎ পাতিলেবু ও লবণ সহযোগে পান করা স্বাস্থ্যপ্রদ ।
২০। কখন কোন
আসন করা উচিত নয় – তা নিম্নে প্রদত্ত হল –
ক) কান
পাকলে, চোখের দৃষ্টি ক্ষীণ হলে ও রক্তের চাপ বৃদ্ধিতে শীর্ষাসন করা উচিত নয় ।
খ) প্লীহা বা যকৃত বৃদ্ধিতে ভুজংগাসন, শল্ভাসন, পশ্চিমোত্তানাসন ও ধনুরাসন নিষিদ্ধ ।
গ)
পুরাতন সর্দি বা নাসিকার পীড়ায় সর্বাঙ্গাসন সতর্কতার সাথে অভ্যাস করা উচিত ।
ঘ) এপেন্ডিসাইটিস ও হার্নিয়ায় পশ্চিমোত্তানাসন
অভ্যাস করা উচিত নয় ।