শবাসন
এই আসন
অবস্থানকালে শব অর্থাৎ মড়ার মত নিস্পন্দভাবে শুয়ে বিশ্রাম নিতে হয় । তাই এই আসনের
নাম শবাসন । প্রণালীঃ চিৎ হয়ে শুয়ে পড় ।
পা দু’টি লম্বা করে দাও যেন দু’পায়ের মাঝে এক থেকে দেড় ফুট ফাঁক থাকে । পায়ের
গোড়ালি ভিতর দিকে এবং আঙুল বাইরের দিকে রাখ । হাত দু’টি লম্বালম্বি শরীরের দু’পাশে
রাখ । হাতের চেটো উপর দিকে রেখে শরীরটা যতটা পার আলগা ( পায়ের বুড়ো আঙুল থেকে
মাথার চুল পর্যন্ত শরীরের সমস্ত মাংসপেশী ও স্নায়ু শিথিল করে দাও যেন বিন্দু মাত্র
শক্ত হয়ে না থাকে )করে দাও ।
এরপর মনটা
দম নেওয়া ছাড়ার উপর রাখ । বহির্জগৎ মনটাকে সরিয়ে এনে সর্বদা লক্ষ্য রাখতে হবে
শরীরের শিথিলতা বজায় আছে কি-না । এই অবস্থায় বহির্জগতের কোন শব্দ শুনতে না পাওয়াই
ভাল ।এরপর দু’টি ভ্রূর মাঝে দম নেওয়া ও ছাড়ার সময় বাতাসের ঘর্ষণ অনুভব কর । মনে
হবে ঠান্ডা বাতাস নাক দিয়ে প্রবেশ করছে এবং গরম বাতাস বেরিয়ে আসছে (১ম ১ মাস নিয়মিত অভ্যাস করলে তবেই ব্যাপারটা অনুভব করা সম্ভব) ।
এ অবস্থায় নাকে কোন শব্দ হবে না ।
যোগাসন শুধু
শারীরিকভাবে করলেই হবে না, চাই সম্পূর্ণ মানসিক প্রস্তুতি । তাই শবাসন করার সম্য
কল্পনা কর পৃথিবীতে নিজে এবং নিজের সত্তা ছাড়া আর কিছুই নেই । নিজেকে ভাসিয়ে দাও মহাশূন্যে
বা মহাসমুদ্রে ।এই সময় ভুলে যাও বাস্তব জীবনের সমস্ত দেনা-পাওনা, সাংসারিক দুশ্চিন্তা । এই
আসনের ফলে সবচেয়ে বেশী বিশ্রাম পায় আমাদের ফুসফুস ও হৃদপিন্ড ।
আসন
অভ্যাসকারীরা যে কোন আসনের পর শবাসন করা কালীন শারীরিক, মানসিক শান্তি ও শিথিলতা
বজায় রেখে আসন অভ্যাস করলে অনেক বেশী উপকৃত হয় । কোন কোন আসনের পর উপুড় (চিত্র দেখ
) হয়েও শবাসন করা যায়। এই ভাবে শবাসন করাকে মকরাসন বলে ।
উপকারিতাঃ মাংসপেশীকে শিথিল করে
দেওয়ার ফলে এদের কর্মক্ষমতা আরও বেড়ে যায় । শিরার মধ্য ভালভাবে রক্ত সঞ্চালিত
হওয়ায় সহজে ক্লান্তি দূর হয় । যাঁরা অধিক রক্তচাপে ভোগেন তাঁদের এই আসন অভ্যাসে
বিশেষ উপকার হয় । শিক্ষার্থীরা এই আসন দিনে
১০/২০ মিঃ অভ্যাস করলে পরীক্ষার সময় অধিক রাত্রি জেগে পড়াশুনায়
স্বাস্থ্যহানি হয় না । চাকুরিজীবী ব্যক্তিরা যদি অফিসে টিফিনের অবসরে নিজ নিজ
চেয়ারে বসে ৫/১০ মিঃ শরীরের সমস্ত
মাংসপেশী ও স্নায়ুমন্ডলী শিথিল করার পদ্ধতি অভ্যাস করেন, তাহলে একটানা কর্মজনিত
ক্লান্তি ৫/১০ মিনিটের মধ্যে দূর করে
নবোদ্যমে বাকী কাজগুলি সুসম্পন্ন করতে পারেন । এছাড়া তাঁরা কর্মস্থল থেকে বাড়ি
ফিরে হাত মুখ ধুয়ে কিছু খেয়ে ১০/১৫ মিঃ শবাসনে বিশ্রাম করে দ্রুত ক্লান্তি দূর করে
নতুন কর্মশক্তি লাভ করতে পারেন । ঊচ্চ
রক্তচাপাক্রান্ত রোগীদের এই আসন বিশেষ প্রয়োজন । কোন আসন অভ্যাসে আমরা যতটা উপকৃত
হই, তার চেয়ে বেশি উপকৃত হই ঐ আসনের পরে
শবাসন করে । তাই এই শবাসনকে খুব ভাল করে অনুভব করতে হবে । অনুভব করতে পারলে এর
মধ্য দিয়েই ঐশ্বরিক আনন্দ পাওয়া সম্ভব ।